ডায়াবেটিসের লক্ষণ : ডায়াবেটিসের মূল লক্ষণ ইংরেজির তিনটি ‘পি’ পলিফেজিয়া বা অধিক ক্ষুধা লাগা, পলিডিপসিয়া বা অধিক তৃষ্ণা এবং পলিইউরিয়া বা অতিরিক্ত ঘন ঘন প্রস্রাব। আরও কিছু লক্ষণ :
* মুখ শুকিয়ে যাওয়া, ঘন ঘন প্রস্রাবে ইনফেকশন।
* স্বল্প সময়ে জানা কোনো রোগ ছাড়াই ওজন কমে যাওয়া, দুর্বল বোধ করা বা অবসাদ।
* ঘন ঘন শরীরে ফোঁড়া, জিবে সাদা ক্যানডিডার আক্রমণ, মহিলাদের যৌনাঙ্গে ছত্রাকজাতীয় রোগের আক্রমণ, পায়ে ঘা বা পায়ের আঙুলের মাঝে ছত্রাকের আক্রমণ।
* ঘা বা ক্ষত শুকাতে দেরি হওয়া।
* হাত-পা অবশ হয়ে আসা বা ভারী ভারী লাগা, মেডিকেল টার্মে এগুলোকে নিউরোপ্যাথি বলে, যার অন্যতম কারণ ডায়াবেটিস।
* খোলা জায়গায় প্রস্রাব করলে সেখানে পিঁপড়া আসা।
* অনেক রোগীর ডায়াবেটিসের কোনো লক্ষণ না-ও থাকতে পারে। অন্য কোনো রোগের জন্য সুগার পরীক্ষা করাতে গিয়ে এ ডায়াবেটিস প্রথমবার ধরা পড়ে।
ডায়াবেটিস প্রতিরোধে করণীয় : ডায়াবেটিস সারা জীবনের রোগ। একবার আক্রান্ত হলে নিরাময়ের আশা একেবারেই ক্ষীণ। তবে এটা নিয়ন্ত্রণ করা খুব কঠিন কিছু নয়। তাই রোগ হওয়ার আগেই একে প্রতিরোধ করা জরুরি। নিচে কিছু টিপস দেওয়া হলো :
* খাদ্যাভ্যাস : ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের মূল চাবিকাঠি নিয়মতান্ত্রিক খাদ্যাভ্যাস। পরিমাণমতো খাওয়ার অভ্যাস, বেশি বেশি সবুজ শাক-সবজি, কম চর্বি ও কম শর্করাযুক্ত খাদ্য গ্রহণ এবং অধিক ক্যালরিযুক্ত খাবার, ফাস্টফুড, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাবার, চকলেট, আইসক্রিম, চিনি ও মিষ্টিজাতীয় খাবার বর্জন বা কম খাওয়া।
* কায়িক শ্রম ও ব্যায়াম : ব্যায়ামের কোনো বিকল্প নেই। সামর্থ্য অনুযায়ী নিয়মিত ব্যায়ামের অভ্যাস, সকাল-সন্ধ্যায় হাঁটাচলা, অল্প দূরত্বে রিকশা বা গাড়ি ব্যবহার না করা, অল্প কয়েক তলার জন্য লিফট ব্যবহার না করা, সম্ভব হলে সাঁতার, জগিং এবং শিশু, কিশোর ও বয়স্ক সবার মধ্যেই কায়িক শ্রমের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। জেনে রাখা ভালো, ব্যায়াম ইনসুলিনের কার্যকারিতা ও নিঃসরণ বাড়ায়, রক্তের ভালো কলেস্টেরল কমায়।
* শিক্ষা ও সচেতনতা : ডায়াবেটিস সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তুলতে পাঠ্যপুস্তকে সঠিক জীবনাচরণ সম্পর্কে তথ্য অন্তর্ভুক্তি, মিডিয়ায় গণসচেতনতা, শিক্ষক, ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব এবং সামাজিক নেতাদের প্রশিক্ষণ, সমাজকর্মীদের সচেতন করে তোলা, সচেতনতায় ক্যাম্প ইত্যাদির ব্যবস্থা করা যেতে পারে। বংশগত বিষয়টি যেহেতু এড়ানো সম্ভব নয় তাই অন্য ঝুঁকিগুলো কমিয়ে ফেলতে হবে। ৩৫ বছরের পর থেকে বছরে অন্তত একবার রক্তের সুগার পরীক্ষা, ওজন হ্রাস, দুর্বলতা, পিপাসা বৃদ্ধি বা ঘন ঘন প্রস্রাব ইত্যাদি কোনো লক্ষণ দেখা গেলে অবিলম্বে রক্তের সুগার পরীক্ষা করে নেওয়া, পরিবারে ডায়াবেটিসের ইতিহাস আছে এমন কেউ সন্তান ধারণের পর রক্তে শর্করা পরীক্ষা করা, গর্ভধারণের ২৪ থেকে ২৮ সপ্তাহের মধ্যে অবশ্যই সুগার পরীক্ষা করা ইত্যাদির মাধ্যমে ডায়াবেটিস শনাক্ত করা যায়। রোগীদের নিজেরই রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখার দক্ষতা অর্জন করা দরকার। জীবনপ্রণালির কাক্সিক্ষত পরিবর্তন, রোগের লক্ষণ ও ঝুঁকি সম্পর্কে জ্ঞানার্জন, কখন কেন সুগার পরীক্ষা করা জরুরি, পরীক্ষার সহজলভ্যতা ও ব্যয় সংকোচন এ বিষয়গুলো সবার জানা উচিত।
* শৃঙ্খলা : ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের মূল ভিত্তিই হলো সুশৃঙ্খল জীবনযাপন। নিয়মমাফিক খাওয়া-দাওয়া, ঠিকমতো হাঁটাচলা বা ব্যায়াম, ওষুধপত্র ব্যবহার ইত্যাদি যারা মেনে চলে তারা যেমন ডায়াবেটিস থেকে মুক্ত থাকতে পারবে তেমনি আক্রান্ত হলেও সহজেই একে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবে। ফলে স্বাভাবিক জীবনযাপন যেমন সম্ভব তেমনি ডায়াবেটিসজনিত জটিলতা থেকেও বাঁচা সম্ভব।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আছে কিনা তা দেখার জন্য মাঝেমধ্যে রক্তের সুগার টেস্ট করাতে হয়। স্বল্প দামের গ্লুকোমিটার দিয়ে বাড়িতে বসে সহজেই এটি করা যায়। অভুক্ত অবস্থায় রক্তের সুগারের পরিমাণ ৬ মিলিমোল এবং খাওয়ার পরে ৮ মিলিমোল কাছাকাছি হলে ভালো নিয়ন্ত্রণে আছে বলে মনে করতে হবে। রক্তের HbA1c মেপেও নিয়ন্ত্রণের ধারণা করা যায়। HbA1c ৭% নিচে হলে তিন মাস ধরে সুগার ভালো নিয়ন্ত্রণে আছে বলে ধরা যায়।
চিকিৎসা পদ্ধতি : ডায়াবেটিসের চিকিৎসার জন্য সংক্ষিপ্ত তিনটি ‘ডি’ অনুসরণীয় :
* প্রথম ‘ডি’ – ডায়েট বা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ, ৬০ থেকে ৮০ ভাগ রোগী এতেই ভালো থাকেন।
* দ্বিতীয় ‘ডি’ – ডিসিপ্লিন বা শৃঙ্খলাপূর্ণ জীবন।
* তৃতীয় ‘ডি’ – ড্রাগ বা ওষুধ, খুব অল্পসংখ্যক রোগীরই এর প্রয়োজন পড়বে।
মনে রাখতে হবে, প্রথম ও দ্বিতীয় ‘ডি’ অর্থাৎ শৃঙ্খলা ও খাদ্য নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমেই ডায়াবেটিস ৮০ ভাগ নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব, ওষুধের ভূমিকা এখানে খুব কম। আবার প্রথম দুটি ‘ডি’কে বাদ দিয়ে শুধু ওষুধের মাধ্যমে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ খুবই দুরূহ।
Dr Jahangir Kabir
Lifestyle Modifier
Facebook Link: https://www.facebook.com/DrJahangirkabircmc/
INSTAGRAM LINK: https://www.instagram.com/drjahagirkabir/
Twitter Link: https://twitter.com/drjahangirkabir
Primary care physician, Trained in Asthma, COPD & Diabetes Trainer in icddr, B & EFH, Uk
Joint secretary at Bangladesh primary care respiratory society
চেম্বারঃ Health Revolution
ঠিকানাঃ সিরাজ কনভেনশন সেন্টার
ব্লক-সি বাসা নং-৩৯/১ (সিরাজ কনভেনশন সেন্টার) ৭ম তলা,
আফতাবনগর মেইন রোড, বাড্ডা, ঢাকা ১২১২
#drjahangirkabir #diabetes #ডায়াবেটিস