সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক কীটনাশক ব্যবহার করে কিভাবে বাড়িতে বিষমুক্ত উপায়ে টবে বেগুন চাষ করবেন তার প্রতিটি ধাপ এখানে তুলে ধরা হলো। টবে বেগুন চাষ করতে প্রথমত টবের আকার সঠিক হওয়া দরকার। যত বড় টব হয়তো ততই ভালো তবে সর্বনিম্ন অন্তত ৫/৭ কেজি মাটি ধরে এমন টবেও আপনি বেগুন চাষ করতে পারবেন। এছাড়া কিছু বেগুন এর জাত রয়েছে যেগুলো আকারে বেশ বড় হয় । এসব জাত এর চাড়া বড় টব বা ড্রামে লাগানো প্রয়োজন।
টবে বেগুন চাষের জন্য মাটি তৈরি
টবে বেগুন চাষের জন্য মাটি তৈরি করার সময় বেশ কিছু উপাদান সঠিকভাবে মিশিয়ে নিন। দোআঁশ মাটি ৫০% , বালি ১০ %, শুকনো গোবর বা পাতা পচা সার ৩০% , এবং ছাই ১০% মিশিয়ে মাটি তৈরি করে নিন। মাটি তৈরির সময় আপনার কিছু বিষয় নিজেকে খেয়াল রাখতে হবে.. যেমন যদি মাটি এঁটেল হয় তবে মিশ্রনে বালির পরিমাণ বাড়িয়ে দেবেন। যদি দেখেন মাটি বেলে দোআঁশ টাইপের তবে বালি একেবারেই দেবেন না। এরকম ব্যবহৃত মাটির অবস্থা দেখে আপনাকে মাটি তৈরি করতে হবে। এভাবে মাটি তৈরি করলে রাসায়নিক সার ব্যবহার না করলেও চলে। তবে আপনি চাইলে বেগুন চাষের জন্য মাটি তৈরি করার সময় একমুঠো মিশ্র সার ( NPK ) দিতে পারেন।
টবে বেগুন গাছে পানি সেচ
টবে বেগুন চাষ এর ক্ষেত্রে পানি সেচ দেওয়া অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি বিষয়। বেগুন গাছে প্রতিদিন পানি দিতে হবে । তবে কোনভাবেই অতিরিক্ত পানি প্রয়োগ করা যাবে না । বেশি পানি দিলে বেগুন গাছে নানা ধরনের রোগ হয় , এছাড়া গাছের পাতা প্রতিদিন ভিজিয়ে পানি দেয়া বিভিন্ন ধরনের ছত্রাক জাতীয় রোগের জন্য দায়ী। বাসাবাড়ির প্রতিদিনের মাংস বা মাছ ধোয়া পানি গাছে সরাসরি দিয়ে দেবেন এতে গাছের অনেক উপকার হয়। মনে রাখতে হবে কোন কারণে যদি বেগুন গাছে পানির অভাব হয় তবে ফলন ভালো হবে না এবং ফল ছোট অবস্থাতেই ফল ঝরে যাবে।
বেগুন গাছে সার প্রয়োগ
রোপণের সময় প্রয়োগ কৃত সার এর বাইরে ও নিয়মিত জৈব সার প্রয়োগ করতে হবে অপরদিকে রাসায়নিক সার প্রয়োগ ততটা গুরুত্বপূর্ণ নয় । এছাড়া গাছের অবস্থা দেখে ইউরিয়া ও অন্যান্য সার গাছের গোড়ার ৬” ইঞ্চি দূরে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। টবের গাছের জন্য সবচেয়ে ভালো হয় তরল সার ব্যবহার করলে। তরল সার তৈরির জন্য ২০০ গ্ৰাম সরিষার খৈল অথবা ৫০০ গ্ৰাম পরিমাণ শুকনো গোবর ২ লিটার পানিতে মিশিয়ে দুই দিন রেখে দিতে হবে। এরপর রাসায়নিক সার দিতে চাইলে , ঐ তৈরি করা তরল সার এর সাথে NPK বা মিশ্র সার এক চা চামচ পরিমাণ মিশিয়ে টবে প্রয়োগ করুন। প্রয়োগের সময় গাছের গোড়া থেকে অন্তত ৬-৮” ইঞ্চি দূরে তরল সার টি প্রয়োজন মত ঢেলে দিন । এই তরল সার প্রতি মাসে দুইবার প্রয়োগ করলে ফলন বেশ ভালো হবে।
বেগুন গাছের রোগবালাই দমন
বেগুন গাছের রোগ বালাই দমন করতে বেশ কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। সাধারনত প্রায় সব ধরনের গাছে রোগ বালাই হয়ে থাকে। এখানে বেগুন গাছের রোগ বালাই দমনের প্রাকৃতিক পদ্ধতি আলোচনা করা হলো।
১, জৈব কীটনাশক প্রয়োগ:
বেগুন গাছের রোগ বালাই দমন করতে জৈব কীটনাশক ব্যবহার করতে পারেন। এই ধরনের কীটনাশক নিম পাতা সেদ্ধ করে বা গাঁদা ফুলের পাতার রস থেকে তৈরি করা যায়। এছাড়া নিমের তেল স্প্রে করেও প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে কীট পতঙ্গ দমন করা সম্ভব। বর্তমানে বাজারে নিমের তেল কিনতে পাওয়া যায়। শসা গাছের রোগবালাই দমন।
২, ব্যাকটেরিয়া জনিত রোগ দমন:
বেগুন গাছের ব্যাকটেরিয়া জনিত রোগ দমনের প্রাকৃতিক পদ্ধতি, এই ধরনের রোগ দেখা দিলে গাছটি সরিয়ে ফেলা উচিত। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই গাছ টিকে সুস্থ করা কঠিন হয়ে পড়ে। ব্যাকটেরিয়া জনিত রোগ দূর করতে প্রাকৃতিক কীটনাশক এর মধ্যে হাইড্রোজেন পার অক্সাইড ব্যবহার করতে পারেন।
৩, প্রাকৃতিক উপায়ে ছত্রাক জাতীয় রোগ দমন :
ছত্রাক জাতীয় রোগের লক্ষণ দেখা দিলে প্রাকৃতিক ছত্রাকনাশক ব্যবহার করতে হবে। প্রাকৃতিক কীটনাশক হিসেবে কাঠের ছাই, বেকিং সোডা, রসুনের তেল, এলোভেরার রস এগুলোর যে কোন টি ব্যবহার করতে পারেন। তবে ছত্রাকের সংক্রমণ বেশি হলে রসুনের তেল ব্যবহার করবেন , এটি বেশ কার্যকরী একটি ছত্রাকনাশক।
৪, Colour trap ব্যবহার করে :
বাজারে একধরনের (Colour trap ) বা জৈব ফাঁদ পাওয়া যায় এগুলো কিনে এনে ব্যবহার করলে অধিকাংশ পোকা মাকড় এর মধ্যে ধরা পড়ে।
৫, বিষ টোপ ব্যবহার করে:
বিষ টোপ ব্যবহার করে পোকা দমন করা যায়। সে ক্ষেত্রে বিষ টোপ তৈরি করার জন্য ১০০ গ্রাম থেঁতলানো কুমড়ার সাথে ১০০ গ্ৰাম পানি দিয়ে ০.২৫ গ্ৰাম ডিপটেরেক্স মিশিয়ে এই মিশ্রণটি মাটির পাত্রে ঢেলে টপ বা ড্রামের কাছে রেখে দিন দেখবেন বিভিন্ন রকম পোকা এর মধ্যে আসবে এবং মারা পড়বে। এই বিষ টোপ এর কার্যকারিতা তিন থেকে চার দিন ধরে থাকে। চার দিন পর পর এটি পরিবর্তন করে দিতে হবে। বেগুন গাছের রোগবালাই দমন।
কিভাবে বেগুন গাছের সঠিকভাবে পরিচর্যা করতে হয়, টবে বেগুন চাষ পদ্ধতি, টবে বেগুন চাষের জন্য মাটি তৈরির উপায়, বেগুন গাছের চারা তৈরির নিয়ম,টবে বেগুন গাছের যত্ন,
টবে বেগুন গাছের রোগবালাই, বেগুন গাছের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাপনা, টবে বেগুন চাষ পদ্ধতি, প্রাকৃতিক কীটনাশক ব্যবহার করে বেগুন চাষ, বেগুন গাছের মাছি পোকা দমন, বেগুন গাছের পাউডালি মিলভিউ এর চিকিৎসা, বেগুন গাছের এনথ্রাকোজেন রোগ ,